কোন জমিনও যেন অনাবাদি না থাকে

মানুষকে বাঁচতে হয়। বাঁচতে হলে খেতে হয়। আর খাওয়ার জন্য উপার্জন করতে হয়। তাই আল্লাহতায়ালা বলেন, অতঃপর যখন নামাজ সমাপ্ত হয়ে যায়, তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অর্থাৎ রিজিক তালাশ কর এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফল হও। সূরা জুমআ-১০।

আল্লাহতায়ালা আমাদের এমন বিষয় চাপিয়ে দেননি যা আমরা করতে পারব না। নামাজ শেষে আমাদের জমিনে ছড়িয়ে পড়ার জন্য বলেছেন। এ আয়াত থেকে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। এক. আমাদের উদ্দেশ্য কী হবে? দুই. কোন কাজ আগে করব তারপর কোন কাজ অর্থাৎ কাজের ধারাবাহিকতা। তিন. কাজের মধ্যে কাকে স্মরণ রাখব অর্থাৎ পথ কী হবে? চার. এভাবে কাজ করলে আমাদের লাভ বা অর্জন কী?

প্রথমত, আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য হল আল্লাহতায়ালার হুকুম পালন করা। আল্লাহকে রাজি ও খুশি করা। এ উদ্দেশ্য সামনে রেখে আমাদের কাজের ধারাবাহিকতা। প্রথমত, আমাদের কাজ হল আল্লাহর হুকুম পালন করব, আগে নামাজ শেষ করব। তারপর দ্বিতীয় কাজ হল জমিনে ছড়িয়ে পড়ব, নিজের বাঁচার জন্য খানা বা রিজিক তালাশ করব। আর তৃতীয়ত, কাজের মধ্যে আল্লাহতায়ালাকে স্মরণ রাখব।

অর্থাৎ কোনো অন্যায় কাজে শামিল যেন না হই। ন্যায়-ইনসাফের দিকে নজর রাখা। উপার্জন করতে গিয়ে এভাবে কাজ করলে আমাদের লাভ হল, রিজিক পাওয়া সহজ হবে আল্লাহ বরকত দেবেন। উপার্জন করার জন্য আল্লাহ বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করেছেন। ভিক্ষা করা কর্মহীন থাকাকে নিরুৎসাহিত করেছেন।

রাসূল (সা.) বলেছেন, নিচের হাত থেকে ওপরের হাত উত্তম। ওপরের হাত যদি উত্তম হয় মানুষকে উত্তম হতে হয়। আর ওপরের হাত হওয়ার জন্য অর্থ প্রয়োজন। অর্থ হলে দান করা যায়। আর দান করাটিই হল ওপরের হাত। সুতরাং এর মাধ্যমে আল্লাহর রাসূল (সা.) উপার্জন করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন।

অন্য হাদিসে এসেছে হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তির জমিন রয়েছে সে যেন চাষাবাদ করে। যদি সে চাষাবাদ করতে অপারগ হয় এবং চাষাবাদ করতে না চায় সে যেন তার মসুলিম ভাইকে জমিনটি দান করে এবং জমিনটি তাকে ভাড়া দেবে না। (মুসলিম হা/১৫৩৬)

জমিন চাষাবাদ করার জন্য বলেছেন। আর জমিন যেন চাষাবাদ থেকে বঞ্চিত না থাকে। উপার্জন যেন হয় যার মাধ্যমে উপার্জন হয় এবং অর্থনীতির উন্নতি হয়। আল্লাহর রাসূল (সা.) ভিক্ষা করা ও কর্মহীন থাকা নিষেধ করেছেন। রাসূল (সা.) এর একটি ঘটনা।

রাসূলের দরবারে একজন ভিক্ষুক এসে সাহায্য চাইলে রাসূল (সা.) তার ঘরে যা আছে তা নিয়ে আসার কথা বলেন, ভিক্ষুকটি কথা মতো একটি কম্বল নিয়ে এলো। হুজুর (সা.) তা বিক্রি করে একটি কুঠার কিনে হাতে দিয়ে বললেন, যাও বন থেকে কাঠ কেটে বিক্রি করে দিনযাপন কর। ভিক্ষুক তাই করল এবং অল্প দিনেই ধনী হয়ে গেল। (আবু দাউদ হা/১৬৪১)

নবীজি ভিক্ষাকে নিরুৎসাহিত করেছেন। সঙ্গে কর্মের দিকে অর্থ উপার্জনের দিকে জোর দিয়েছেন। সুতরাং আমাদের অর্থনীতিকে উন্নত করতে হবে। তা হতে হবে পরিশ্রম করে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) এর দেখানো পথে হতে হবে। এভাবে যদি কেউ চেষ্টা করে তখন আল্লাহ তার পথ সহজ করে দেবেন।

লেখক : পরিচালক, ইসলাহ বাংলাদেশ